মনোপলি বোর্ড
অপ্রতিম রাজীব
ড্রয়িং রুমে
রঙীন দেয়াল-ঘেরা ভ্যাকুয়াম ড্রয়িং রুমে রাত-দিন। সময় কাটে প্রিন্ট করা নিষ্ঠুরতার রুটিনে।
কাঠঠোকরা পাখির শরীরে ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করি। নীলকণ্ঠ পাখির শরীরে ধাতুর সিল লাগাই। তাকে পারটেক্স দেয়ালের সাথে পেরেক দিয়ে বিঁধি। সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার আর্তনাদ ও বিরতি। এভাবে ঘরের মধ্যে ক্রস আকারের অ্যালার্ম ঘড়ি তৈরি হয়।
ডিস্ট্যাম্পার্ড বাংলোর কক্ষে কক্ষে স্ট্রবেরি রঙের বৃষ্টি। নীল আকাশ আর সবুজ ক্লোরোফিলের হাইব্রিড গুঁড়ো দুধ। বেসিনের টেপ খুললেই ঝরে পড়ে এক মগ তরল জ্যোৎস্না।
একটি সবুজ সরীসৃপ। তার হলুদ ডিমের ভেতর আকাশী রঙের কুসুম। সেই সূর্যকে বরফের আগুনে ওমলেট করে খাই। পাকস্থলীর ভেতর জন্মায় হলুদ রঙের ডিজিটাল জ্যোৎস্না।
পত্রিকা নিয়ে বসি, এক গোছা শিরোনামে লেন্সের রে ছড়াই:
নগরীতে কোলা ব্যাঙের মশাল মিছিল ঘ্যানর ঘ্যানর স্লোগান
ঘাস ফড়িঙের নার্সারী স্কুলে রাত দু’টোয় অ্যাসেম্বলির ঘন্টা
টিকটিকির গান-বাজনায় অতিষ্ঠ প্রজাপতির মামলা
সাপ আর নেউলের অনেক দিনের গোপন ডেট্
স্বপ্নের বাগানে যাই। স্মৃতির বাতাসে বিস্রস্ত চুল। প্রতি সেকেন্ডে টিকটিকির শীৎকার। প্রতি মিনিটে ব্যাঙের হুইসেল। প্রতি ঘন্টায় নাইটেংগল পাখির সাইরেন। এভাবে আর্ডেনের ভেতরও ঘড়ি।
তৃষিত তন্দ্রার তিমিরে
১. দিন-রুটিন
ফ্লাস্ক থেকে ঢালি এক মগ জ্যোৎস্না। এক বাটি রোদের সঙ্গে মিক্স করে খাই, অদূরে ট্রেনের রিদম্। ড্রায়ার দিয়ে শুকাই শাওয়ারে ধোঁয়া চুল। বাথরুমটাও মরা মর্গ।
সিজোফ্রেনিয়া রোগীর প্রেমের মতো তীব্রতায় আটলান্টিক মহাসাগরে পড়ছে বসন্তের বৃষ্টি। গোলাপের পাপড়ি খুবলে খুবলে পড়ছে খন্ড খন্ড রাত। এস্রাজের তালে তালে ফোটে ফুল। এক রাশ স্বপ্ন। কমলালেবুর খোসা ছাড়ালে এক ফালি প্রেম। প্রেমের জ্যোৎস্না। সুরম্য বাগানে অচেনা নারীর সঙ্গে কাটাই এক প্রহর। মগজে মগজে স্বপ্নের মনোপলি খেলা।
২. লোডশেডিং
সে আমাকে স্বপ্নে দেখেছে বার বার। স্বপ্নে সে আমার সঙ্গে অতৃপ্ত প্রেমের পেপসি পান করেছে। স্বপ্নে সে অপূর্ণ প্রেমের ক্ষতে স্যাভলন লাগিয়েছে। বালিশ নিয়ে কল্পনার টেলিভিশনে আমার সঙ্গে একটানা খুনসুটি করেছে। ঠোঁটে ঠোঁট ঘষে কোকাকোলা পান করেছে। তার সেই নিরন্তর পানযজ্ঞ আমার নিজস্ব পৃথিবীতে কোনো বৃষ্টিপাত ঘটায়নি। আর আজ আমার নিজস্ব পৃথিবীতে শুধুই একটানা লোডশেডিং। আমার নিজস্ব পৃথিবী নদী-বন-পাহাড়-জ্যোৎস্না-মরা ঘাস-আলপিন-উঁইপোকা দিয়ে ঘিরে রেখে সে চলে গেছে।
৩. প্রত্যাখ্যান
মুঠোফোনে আমি তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাম এক ফালি জ্যোৎস্না। সে ওই ম্যাসেজটা নিয়ে রাতের পর রাত রিসার্চ করেছে চোখের পাতায় ফ্রিজের ঠান্ডা বোতলের ঘাম লাগিয়েছে সিগ্রেটের ধোঁয়ায় সিলিংয়ে কালো মেঘ জমিয়েছে তারপর তার রিটার্ন ম্যাসেজ হিসেবে পাঠিয়েছে এক রাশ বৃষ্টি।
৪. ভাইরাস
Tar prem amar mogoje ekti pen-drive. Moner database-e shey nijer nam entry kore nieche. Word processor-eo bishonno sritir document type koreche. Tarpor-ee tar prem virus hoye amar shomosto program nosto kore dilo. Ami cyborgti bar bar hanged hoye porchi. Shei shate oshonkho namer bisrinkhol electric signal shomosto hardware-e kee tumul short circuit ghotachhe! Bhoy hoy jodi berthotar torit probaho sheshe high voltage shock hoye bishphoron ghotay. Tarpor-o ami virtual bastobotar ei mora jogotei dube achi. Aar ekhanei jonmo dicchi programer ekekti khati phul.
৫. ফাংগাস
স্মৃতিকে টেনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে কমোডে ফেলি। ফ্লাশ বাটনে চাপ দিই। সব অগণিত বর্জ্য মলের সাথে বুড়িগঙ্গা নদীতে হারায়। জড় সবকিছুই দুঃসময়ের খাবার হয়ে ওঠে। রাতের খাদ্য অন্ধকারের ফ্রাই। আর দিনের ড্রিংক রোদের কোলা। বিশাল নীল কড়াই উপচে পড়ে জ্যোৎস্নার স্যুপ। পাতায় পাতায় ক্লোরোফিলের ফ্যাক্টরির ঘর্ঘর শব্দ শোনা যায়। ইলেক্ট্রিক ক্যাবল থেকে বেরিয়ে আসে ঘ্রাণ-খাদ্য রজনীগন্ধা ফুল। রাতের পাড়া ডিম ভেঙে ছিটকে পড়ে লাল জ্যোৎস্না। ফ্রিজের বোতল লেপ্টে লেগে থাকে ইলেক্ট্রিক শিশির। জমে থাকে রৌদ্রের রোস্ট, জ্যোৎস্নার স্যুপ, মেঘেদের ফ্রাই। ঘুমহীন রাতে বালিশে বালিশে প্রেমের ক্লান্ত ফসফরাস মিশে যায়। রাতের বাতাসে নিরুদ্দেশ ঠিকানা থেকে নষ্ট রুটির পিঠে জমে ওঠে এক প্রস্থ ফাংগাস।
৬. নীল বোতলের ভেতর
ছাব্বিশ বছর আগে আমার জন্ম হয় একটি নীল বোতলের ভেতর। সেই থেকে নীল জ্যোৎস্নায় হলুদ মল ত্যাগ করে চলেছি। এই নীল বোতলের ভেতরেই টিকে আছে আমার চেতনা, সৌন্দর্যবোধ, একাকিত্ব, রাগ-দ্বেষ, জড়ত্ব। নীল বোতলের ভেতর সবুজ ঘাসফড়িং সাদা বক হলুদ পাতা জন্মাচ্ছে আর এভাবেই আমার নিজস্ব জগৎটাও ওয়েবসাইটে জন্ম-নিবন্ধন করে নিচ্ছে। কিন্তু দিনের পর দিন আমার আবাস বোতলটির রঙ নীল থেকে হলুদে পাল্টে যাচ্ছে। বোতলের ভেতরের জলও হয়ে যাচ্ছে ফিকে হলুদ। মরে যাচ্ছে ঘাসফড়িং, বক, পাতা। এই হলুদের পীড়ন থেকে আমি মুক্তি চাই। নীল মদের মাতলামি থেকে আমি মুক্তি চাই। তাই খুব ইচ্ছে বোতলের কাচটি ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাক। প্লিজ একটি অতীন্দ্রিয় ক্লাস্টার বোমা!
৭. প্রতিজ্ঞা
প্রতিদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে সারা দিন মানে বাকি দিন ভালো হয়ে চলার প্রতিজ্ঞা করি। ব্যাক গিয়ার করে বললে সেই ঘুমের ভেতর স্বপ্নে দেখি আমি একটি ভিডিও গেমের ভেতর প্রচন্ড গোলাগুলির মধ্য দিয়ে চলছি। আর সেই গোলাগুলির সাথে সাথে একটা কুনো ব্যাঙ আমাকে সুযোগ না দিয়ে কমোডে একটানা প্রস্রাব করে চলেছে। তখনই মানে ঘুমের মধ্যেই ওমন প্রতিজ্ঞা। ঘুম ভেঙে গেলে পরে চা খেয়ে স্নান করে লাঞ্চ করার পর সন্ধ্যায় টিভি দেখার সময় গামা রে এসে চোখে পড়ে আর স্বপ্নের কথা শপথের কথা বেমালুম ভুলে যাই। গামা রে রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত আবার স্বপ্ন দেখায়।
৮. ভাবনা
প্রথম জন্মে মেঘ ছিলাম। তখন ভাবতাম, নীল আকাশে ভেসে বেড়ানোর মধ্যেই সার্থকতা। পরের জন্মে সারস হলাম। তখন সাদা মেঘের ফাঁকে আকাশের নীল মাঠে উড়ে বেড়ানোই ছিল চূড়ান্ত লিপ্সা। পরজন্মে হলাম নদী। সমুদ্রের সাথে মিশে যাওয়ার চেয়ে সার্থকতা আর কিছু নেই বলে মনে হতো তখন। তারপর হলাম মানুষ। এজন্মে ভাবি অস্তিত্ব রক্ষাই একমাত্র লক্ষ্য। এভাবে নামধামের সাথে ভাবনার কী আশ্চর্য মিল!
৯. স্বপ্ন-জগৎ
আমার সমস্ত স্বপ্ন আমি একটি বোতলে ভরে রেখেছিলাম। তখন বোতলের রঙ ছিল হলুদ আর বাইরের পৃথিবীও ছিল ধূ ধূ মরুভূমি। বোতলের কর্ক খুলে স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিলাম আকাশে বাতাসে। মাঠে মাঠে ফুটে উঠলো ফুল, পৃথিবী হয়ে উঠলো শস্য শ্যামলা, আকাশও হয়ে উঠলো বেগুনী আর তাতে আবীর রঙের মেঘ। কালো মহাকাশে স্বপ্নগুলো লেখা হলো নীলাভ অক্ষরে।
১০. স্বপ্ন নিরন্তর
এককালে আকাশ ছিল সবুজ। বললাম, “হে আকাশ, লাল হও।” আকাশও লাল হলো। ভালো লাগলো না। এবার বললাম, “আকাশ, আবীর-বর্ণা হও।” আবীর-বর্ণা হলো। তারপর বললাম, “বেগুনী হও।” সে তাই হলো। এভাবে একে একে বহু রঙে রঙীন হলো আকাশ। শেষে বললাম, “হে আকাশ, তোমার নামের রঙে রঙীন হও।” একথা শুনে আকাশ আশ্চর্য আকাশী রঙ ধারণ করলো। আর তার বিস্তীর্ণ জমিতে জন্ম নিলো সাদা মেঘের দল। নিরন্তর স্বপ্নের ধারা থেকে আমার মুক্তি নেই, মুক্তি নেই, মুক্তি নেই…
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিআপনারা কেউ পিনোচিওর খোঁজ জানেন? সে হারিয়ে গেছে। কিন্তু কোথায়? ইলেক্ট্রনিক বিস্তীর্ণ হৃদয়ের টানেলে যেখানে শ্বাপদসংকুল বনে মৌমাছিরা ডুকরে কাঁদে? নাকি সে হারিয়েছে টিরেক্সের নীল ডিমের ভেতর যেখানে রাতদিন শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক? নাকি সোডিয়াম আলোয় ঢাকা রোবোটিক মেট্রো শহরে যেখানে ফাউস্ট ম্যারিও স্মিগলরা জেব্রা ক্রসিং বরাবর হেঁটে বেড়ায়? কোথায় সে নিরাকার দিব্য রথ? নাকি ফ্লুরসেন্ট আর্ডেনের ভেতরকার স্বপ্নরাজ্যে ইন্টারপোল যেখানে নীরব? নাকি সে হারিয়ে গেছে বিশাল সে দানবের পাকস্থলীতে যেখানে সুরে সুরে আকাশে আকাশে মেঘমালা এঁকে চলে পিকাসো ও র্যাফায়েল? সে নারীর হৃদয়ে – সোনালী জ্যোৎস্নায় যেখানে গিটারের তারে তারে সঙ্গীত-পূর্ণিমা? বৈদ্যুতিক সেতার ও আলোর নৃত্যে ভাইব্রেশানের বৃষ্টি ও রোদ? হলুদাভ এ হারানো বিজ্ঞপ্তি দেখে কেউ কি আসবে না নিঃসঙ্গ সম্রাটের এ ময়ূরপঙ্খী রাজবাগানে? |
২/১০/২০১৩
জীবন
স্বপ্ন | লাল | নীল | কমলা | সোনালী | হলুদ |
সুর | উল্লাস | ক্রোধ | দ্বেষ | অশ্রু | চীৎকার |
প্রেম | নদী | ফুল | চাঁদ | আকাশ | রাত |
কাম | আগুন | বাতাস | জল | শূন্য | মাটি |
স্মৃতি | মেঘ | মন্দ্র | রোদ | বজ্র | বৃষ্টি |
জীবন | স্বপ্ন | সুর | প্রেম | কাম | স্মৃতি |
২০/৯/২০০৪
শিরোনাম
পুলিশ হত্যা মামলা তদন্তে পুলিশেরই গা নেই
নোয়াখালীর বয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৫ বনদস্যু নিহত
কাফরুলে শিশুকে জবাই করে হত্যা
চুয়াডাঙ্গায় ঢুকে ভারতীয় ডাকাতদের তান্ডব
দেশজুড়ে মৌসুমী বৃষ্টিপাত গরমে স্বস্তি নিয়ে এসেছে
৬/৬/২০০৩
[কবিতার লাইনগুলো ৬.৬.২০০৩ তারিখে প্রকাশিত ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার শিরোনামসমূহ থেকে নির্বাচিত।]
ম্যারিওর সিমেন্ট কারখানা
ভিডিও গেমের এক সিমেন্ট কারখানায়
এক তৎপর কর্মী ছিল
ম্যারিও যার নাম।
লিফ্ট দিয়ে ওঠানামা, যাতায়াত করতো সে
এক তলা থেকে অন্য তলায়।
নিচে দু’টো ওয়াগন ছিল
যে দু’টোতে ফেলতে হতো সিমেন্ট।
কিন্তু যদি কোনোক্রমে ওয়াগনে সিমেন্টের পরিমাণ বেড়ে যেতো
অমনি ঘটতো দুর্ঘটনা।
আর লিফ্ট থেকে পা পিছলে পড়লে
মৃত্যু ছিল অদৃষ্টে অবধারিত।
অমনি দুর্ঘটনার মুখে
বার বার পড়েও ম্যারিও
বেঁচে যেতো; তিনটি জীবন ছিল তার।
ম্যারিওর দেহ-মনে চাড়া দিতো ক্লান্তির পাহাড়।
তারপর লাফ দিতো কিংবা বাড়তি সিমেন্ট ফেলে
ঘটাতো বিপদ।
ক্লান্তির রেশ ধরে মৃত্যু হতো তিনবার (সাস্পেনশান?),
শেষ হতো কাজ
যখন এ’ খেলা
ক্লান্ত সত্তা আমি অফ্ করতাম
নিয়ন্ত্রণ নামটিকে সম্পূর্ণ হারিয়ে।
এভাবেই এক সত্যিকার রক্ত-মাংসের ম্যারিওরও আয়ু
মুহূর্তে হারায়।
তারপর আবার
জেগে ওঠে, জাগরণ ও সুপ্তির ভেতর
বাস করে পালাক্রমে আর এভাবেই
পালা করে জীবন ও মৃত্যুর দোলাচলে
অস্থিমান হয়ে থাকে।
২০০৪
১১:৫৯ পি.এম.
রি-ফ্রেশ ক্লিক করতেই শাওয়ারের গিয়ার বদল
প্রজেক্টার থেকে বের হলো শূন্য-বিস্তৃত প্রিজম
ওল্ড কেন্ট রোডের উত্তাপ থার্মোমিটারে ১০০৫ মাইনাস
মিনি মাউস মিকি মাউস স্মিগল সব পার হচ্ছে জেব্রা ক্রসিং
সবকিছু টেনে নিচ্ছে একটি রোবোটিক ক্রেইন
এয়ার কুলারে ঠান্ডা বাতাস
ফ্লুরসেন্ট ফ্লাড-লাইটের জ্যোৎস্না
মাথার উপরের নীল স্ক্রিণ বাঁচাতে ব্যস্ত ওয়াইপার
রেফ্রিজারেটেড ভ্যাকুয়াম গ্রীন হাউজের ভেতর একটি প্রজাপতি ইলেক্ট্রকিউটেড
ইলেক্ট্রিক তারে তারে গীটারের মাতাল চিৎকার
বিল-বোর্ডে পাপেটের শো
টমদের বুকের ভেতরের ভালভগুলো করছে ভাইব্রেইট
হার্ট-স্পেইড-ক্লাবস-ডায়ামন্ড একেকটি ডানা মেলা ওরাংওটাং
স্লিপিং পিল এডিক্ট রুবিক্স কিউব অনবরত বদলাচ্ছে সাইড
ডোমিনোর সংখ্যাগুলো কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না
নার্ভাস অ্যালার্ম ঘড়িটি ড্রাম বিট করে চলেছে
স্লিপার পাল্টাচ্ছে টয় ট্রেন অনবরত
ম্যাডোনা- লেডি গ্যাগা- শাকিরা- কিডম্যান ডানা মেলেছে স্ট্রবেরি রঙের নিউক্লিয়ার মেঘে
পিকাডেলি স্ট্রিটে পৌঁছতেই মনোপলি বোর্ডে বিস্ফোরণ-বিস্ফোরণ-বিস্ফোরণ
মন্দিরে-ক্যাথিড্রালে-প্যাগোডায় টাইম মেশিনের ওয়েটিং রুম
আটলান্টিক-প্রশান্ত-ভারত-উত্তর-দক্ষিণ সব কমোড ফ্ল্যাশ করতে হবে
তাই তীক্ষ্ণ সাইরেন দিচ্ছে মিকাইল ফ্যান্টম
আর গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন লোড করছে ওয়াগনে
মহাবিশ্বকে বল করে নেটে ঠেলছে রেফ্রি
কিক দিলো একটি টর্পিডো
জিদান না মাতেরাৎসি? কার হাতে উঠবে ওয়ার্ল্ড কাপ?
২৫/৯/২০১২
ক্যাসিনো রাজ্য
নিয়ন গ্যাস-লাইটের ডিজিটাল পূর্ণিমায়
কালার্ড কনটাক্ট লেন্স চোখে চিয়ার্স গার্ল ফ্লুরসেন্ট নগরীতে হাঁটে
মাথার উপর দিয়ে এক রোল ফেশিয়াল টিস্যু
ফেয়ারনেস ক্রিম মেখে শোঁ শোঁ শব্দে ঊড়ে
হাই-রাইস বিশাল এক কী-বোর্ড বাজিয়ে চলে হরর মিউজিক
লিপস্টিক আঁকা ঠোঁট থেকে একটি স্পন্সরড চুমু
মোবাইল সিগন্যাল হয়ে গ্রহের উল্টো পিঠে মাইগ্রেইট করে
মার্সিডিস কার ড্রাইভ করে সব চলে ব্লু-টুথের ডেন্টিস্ট চেম্বারে
সেন্টের বৃষ্টি মুছে দিতে চালু হয় গ্লাস-ওয়াইপার
গ্রহ-বিস্তৃত লম্বা এক স্ক্রিণে গট গট করে হাঁটে
টম ক্রুজ- কেটি হোম- ওরল্যান্ডো ব্লুম
বডি স্প্রে ও পারফিউম মেখে টেলিভাইসড হাই তোলে মডেল তারকা
এম্পায়ার স্টেইটের উপরে জমা স্ট্রবেরি আইসক্রিম থেকে
তুষার পড়তে থাকে ফ্যান্টাসি কিংডমে
হোর’স পার্লার সিটিতে ক্যাসিনোর আড্ডা জমে
এবং মুদ্রার স্কাই-স্ক্রেপারগুলো হাত বদল হতে হতে কাত হয়ে পড়ে
টেবিলে ধসের শব্দ হয়
বিপদ সঙ্কেত দেখে কুইন ম্যাব নামে কড়া ডোজের স্লিপিং পিল হাতে
তারপর ক্যাসিনোর যোদ্ধারা স্বপ্নরাজ্যে ঢুকে পড়ে টাইম-মেশিনের গেইট দিয়ে
মিলেনিয়াম – ইডেন উদ্যান – ডিজিটাল পূর্ণিমা – নগ্ন অ্যাডাম ও ইভ
২৯/৯/২০১২
এনেসথেশিয়া
চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের উপর
বেহুঁশ ভ্যালেন্টাইন
ইসিজি স্ক্রিণের রেখা লক্ষ্যবিহীন
স্ট্রেথোস্কোপে হার্ট-বিট শোনা যায় – উন্মাতাল রক মিউজিক
এক্স-রে ফিল্মে হার্ট লাল নয় – নীলও নয় – কালো ব্ল্যাকআউট
ফুসফুসের এম.আর.আই ভীতিকর ভূতুড়ে নেগেটিভ
একটি সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেক্ট করা হলো ত্বকে
মনিটরে তবুও টেনশান
এম্বুলেন্স মাতাল ড্রাইভারের ও.টি.
ব্রেইনের ভেতরে ইলেক্ট্রিক ফিউজ
সমস্ত নার্ভাস সিস্টেম জুড়ে এখন লোডশেডিং
মেমোরিতে ঢুকেছে ওয়াই-টু-কে ভাইরাস
সেলাইন-ব্যাগে টেকনো পেনিসিলিন
……… কমা ……… ইনফ্যার্নো
কোনো থ্যারাপিতেই রক্ষে নেই
অ্যাফ্রোডাইটি – অ্যাফ্রোডাইটি – হে ডক্টর অ্যাফ্রোডাইটি
ওলিম্পাস রাজ্যের দরজা খুলে দাও
এম্বুলেন্সের ব্রেক ফেইল
১/১০/২০১২
স্লগ ওভার
একটি নরম ফুল টস বল এসে পড়লো সৌরকক্ষে
কোরোফিলের কারখানা ইনকিউবেটারের ভেতর
ডিফেন্সিভ স্ট্রোক
হ্যাডফোনে মুনলাইট সোনাটা
থ্রী-ডি স্ক্রিণে ভারচুয়াল স্ট্রবেরি আকাশ
আবার ডিফেন্সিভ স্ট্রোক
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল ওমিক্রোণিক রূপান্তরের আগে
প্যান-ড্রাইভে তার মেঘলা স্মৃতি
এবার ত্বরিত এক রান
দুঃস্বপ্নের মুখস্থ স্মৃতিতে শুধু বুলডোজারের শব্দ
বাউন্ডারি
বুলডোজার নাকি বুলডগ?
হাঁসের পা খেতে সব ঢুকছে বেইলি রোডের ড্রামস্টিক রেস্তোরাঁয়
রোলার কোস্টারে প্লেটোনিক বছরের ঘুম
ওভার-বাউন্ডারি
ডুম-থ্রি খেলার টেনশান চাড়া দিয়ে ওঠেছে স্টেডিয়াম জুড়ে
নার্ভাস নাইনটি নাইন
ম্যাঁও ম্যাঁও করে ডাকছে শ্রোয়েডিংজারের কালো বেড়াল
ঝুঁকির রান নিতে যেয়ে থার্ড আম্পায়ারের লাল বাতি
হে মহামান্য ক্যাসিনো-ঈশ্বর, এবার কি খেতে পাবো আপনার সুস্বাদু ড্রামস্টিক?
২৫/১০/২০১২
মারীচ রাক্ষস™
ফার্স্ট ফ্লোর সেকেন্ড ফ্লোর সিক্সথ ফ্লোর ফিফ্থ
লাল বাতি নীল বাতি কমলা সবুজ বাতি ট্র্যাফিক সিগন্যালে
উপরে উঠছে লিফ্ট – পিশাচ আর পেত্নীতে ভরা
নিচের সমস্ত লোক গণনার অতীত লিলিপুট
ভুল করলেই মালামাল চালকের মুন্ডু পিষবে
অতএব হুঁশিয়ার কারখানার কর্মী ম্যারিও
ভিডিও গেমের সেট জুড়ে ক্যামিকেল তেরঙা মেঘ
ইউনিয়ন জ্যাক নেমে স্টেডিয়ামে ৫১ তারার পতাকা
কুইন ম্যাব সর্বক্ষণ রিলাক্সেন ট্যাবলেট নিয়ে ঘুরে
মনোপলি বোর্ডের ঘরে ঘরে
একটু ভুল হলেই ম্যারিও পড়ে যাবে ওয়াগনের ভেতর
তার ঘাড়ে তার স্বপ্নে তার নিজস্ব আকাশে এক মারীচ রাক্ষস
তাই লিফটে চড়া ওঠানামা লিফটের ভেতরে জীবন
থার্ড ফ্লোর সিক্সথ ফ্লোর ফোর্থ থার্ড এইট্থ
ল্যাবে বসে ফাউস্ট করে চলে ক্যামিকেল এসিডের গবেষণা
ওয়ার্ল্ড কাপ ফিনালের ফল নিয়ে ফস্টাস ম্যারিওর যত টেনশান
ফর্মালিন্ড অমারাতে পুলে ফুটছে রাহুগ্রস্ত সোডিয়াম লাইট
নার্ভাস স্লিপ অভ ফিট
ম্যারিও কি এরপর পরিণত হবে কোনো রাক্ষসপ্রতিম মারীচে?
১৭/১১/২০১২
গ্রীন হাউজ
স্যাটেলাইট তার লোহিত আভা নিয়ে মুখ ফেরাল গ্রহটির দিকে
চারপাশে নীল কাচ
সোনালী চেয়ারে বসে সিন্ড্রেলা খাচ্ছে এক বাটি তরলিত রোদ
তার মসৃণ আঙ্গুল জুড়ে স্যুপ চামচ
ভ্যাম্পায়ার খেতে চায় আকাশের নীল রক্ত
বৃষ্টির পেপসি কিংবা মেঘমালার আইসক্রিম
হেমন্তের ঝরা ফুলের সালাদ মুখে পুরলো ফ্যান্টম
গাছগাছালির পেস্তা খেতে উদগ্রীব ক্ষুধার্ত ক্যাসিনো সম্রাট
বল ড্রিবল করে এগিয়ে যাচ্ছে অ্যালবার্টো টোরেস
ফাঁকতালে খাওয়া যাক রঙধনুর স্বপ্ন-চকোলেট
কেএফসি রেস্তোরাঁ আজ গ্রীন হাউজ প্রজাপতিময়
ব্ল্যাক-আউট পূর্ণিমায় জোনাকীর মাংস খেতে চাই
সব প্যাগান দেবতা আজ খাদ্য নির্বিচারে
হাউজের ভেতরের উত্তাপে গরম কাবাব নীলকণ্ঠ
তুষার স্যস্ ব্যাঙ্গমার প্রিয় এক ম্যানু
বেসিনের টেপ থেকে গ’ড়ে পড়ে এক গ্লাস তরল জ্যোৎস্না
চত্বরে চত্বরে স্ট্রবেরি জ্যুসের ফোয়ারা অন্তহীন
পেলের পাস – অ্যালবার্টো টোরেসের গোল
বাকি ছিল – হয়ে যাক কাঁচঘরের বাদবাকি খাওয়া
হে ক্ষুধিত সিন্ড্রেলা আজ অতন্দ্রিত এই রাত তোমার আমার
২/১১/২০১২
রঁদেভূ
মধ্যরাত – উন্মাতাল রক মিউজিক
ওয়াইন কাপ একেকটি স্ট্রবেরি ক্রিমবার
স্পর্শ চুমু আলিঙ্গন রোমিও ও জেনেলিয়াদের
কাপে কাপে সংঘর্ষ কাপ সব ভেঙে চুরমার
ভেসে আসে লক্ষ মাইল দূর থেকে ফসল কাটার শব্দ
সপ্তম বিকৃত চুম্বন
দিনের আলোর পৃথিবীর নীলাকাশ
ফরাসি চুম্বন
নির্বিকার নিঃশব্দ তন্দ্রা
কেটি হোম এসে তন্দ্রালীন স্বপ্নে চুমু খায়
জ্যোৎস্না রাত পূর্ণ চাঁদ আকাশে আকাশে স্বপ্নলীন
ঠোঁট দিয়ে সূর্যডিম ঠুকরে খায় স্বপ্নময়ূর
দু’শতাব্দী আগেকার ঘাসের আঘ্রাণ দেয় উঁকি
ফিডার বোতলের নিপল চুষে মদ খায় রাতের যাত্রী
ক্যাটরিনা রোনালদিনহো নাইট ক্লাবে ঘুরে
লেথারজিক ব্ল্যাক-আউট
শরতের শীর্ণ শিশির
হতাশ দখিনা হাওয়া
ফসল কাটার শব্দ – লোড-শেডিং – কান্নার রাবীন্দ্রিক নিক্কণ –
যুদ্ধের দামামা বেজে চলে অজানিত কাল জুড়ে
আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি
১১/১/২০১৩
বার্নার
স্যাটেলাইটে ছড়িয়ে গেল হ্যাংগড ইমেজিং নিয়ে ফিসফাস,
১০ মেগাবাইট স্মৃতির কোরিডোরে তোমার লাস্যময়ী হাঁটা;
নীল টেলিফোন সেটটি বহুকাল পড়ে আছে ড্যাড,
ডিজিটাল নোটবুকে শুধু জমা অজস্র স্পাইওয়্যার চুম্বন।
বার্ন করে তুমি আমার এ সিডিতে করেছ কপি
তোমার ইলেক্ট্রিক স্পন্দন;
আমার হার্ডওয়্যারে আজ শুধু সফ্ট ভাইরাস;
আমার প্রোগ্রামগুলো নষ্ট হয়ে রিসাইকেল বীনে,
পাসওয়ার্ড ব্রেক করে রেখেছ গোপন ফাইলে নিরাকার হাত।
শর্ট সার্কিট হয়ে আমার নিজস্ব রোম পুড়ে ছারখার;
অতএব হে ভিনাস তোমার প্রথম প্রেম নিরোকে পাঠাও :
প্রোগ্রামের বহ্নুৎসবে সে গেইমার এসে দিক সুরের ইন্ধন,
ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করুক মেমোরিতে গান,
নিরো তো জানেই এ সফ্ট অগ্নিকান্ডে সে পুড়ে মরবে নিজেও।
৫/১০/২০১২
রুবিক্স কিউব
সাইড ঘুরালাম
লাল মেঘ নীল বন কমলা আকাশ
সাইড ঘুরালাম
হলুদ নদী আবীর হ্রদ সাদা কাক
কুহু কুহু কুহু
সাইড ঘুরালাম
কমলা ঈর্ষা হলুদ প্রেম সবুজ চোখ
কো-কো-রিকো-কো-কো-রিকো
সাইড ঘুরালাম
নীল গোলাপ সাদা গাঁদা লাল রজনীগন্ধা
নিরাকার নিঃশব্দ তন্দ্রার্ত চোখ
সাইড ঘুরালাম
হলুদ পায়রা ডুরে শস্য স্ট্রবেরি মাটি
ফসল কাটার গান
ঘোরের আগে শেষবার সাইড ঘুরালাম
নীল প্রেম লাল ক্রোধ কমলা সুর সবুজ সুখ
চিচিং ফাক
পরিতৃপ্ত প্রশান্ত নীল ঘুম
৩/২/২০১৩
ফেইসবুক
থ্রী-ডি কনটাক্ট লেন্স চোখে
সামনে কালার্ড মনিটর
রেটিনায় ভাইব্রেশান অসংখ্য মুখের
শ্রাবন্তী অনিন্দিতা সুরঞ্জনা বর্ণালী শুধু নয়
অসংখ্য অপ্রতিম মুখের জটলা
ফ্লাইং কারে চড়ে সব উড়ে ভ্যাকুয়াম টানেলে
একে একে দেখা দেয় আবীর অনন্য অভ্র অনিকেত
দৃশ্যমান হয়ে ওঠে সবার পেছনে সুদৃশ্য একেকটি লেজ
শিম্পাঞ্জি গরিলা বেবুন লেমুর ওরাংওটাং
টি-রেক্স ব্রন্টোসোরাস টেরোডাকটিল
পরস্পর অচেনাপ্রতিম
অন্ধ সিনানথ্রোপাসের মুখে নাস্তিক নাস্তিক চিৎকার
সে হয়তো কোনোকালে হোমো স্যাপিয়েন্স ছিল
আজ ব্ল্যাক-আউটে সবার চেহারায় গিরগিটির মতো রূপান্তর
হোমো ইরেক্টাস ক্রোম্যাগনন নিয়ানডার্থাল
রেড লাইট
ব্যাটসম্যানেরা সব ধরছে প্যাভিলিয়ানের পথ
রাগান্ধ এক ষাঁঢ় তেড়ে আসছে লাল কাপড় দেখে
চৌরাস্তার মুখে আমি একা
দিগভ্রষ্ট অনিশ্চিত অসহায় এক স্পেনিয়ার্ড
৬/৪/২০১৩
নিরো বার্ন
হাই স্পিড ট্রেইন চলছে সূর্যের ভেতর দিয়ে
স্বপ্নের বুদবুদের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে ট্যাঙ্ক
টানেল ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে টমা হক মিসাইল
বৈশ্বিক রেফ্রি বাঁশি বাজাচ্ছে হোয়াইট হাউজে বসে
আন্দামানে সুরের লহরী নীল কৃষ্ণের
বুলডোজার ধেয়ে আসছে ভেঙে ফেলবে তাজমহল
আইফেল টাওয়ারে ইলেক্ট্রিক ভাইব্রেশান
লুডোর স্টেডিয়াম জুড়ে দর্শকের সাম্বা নাচ
নিউক্লিয়ার বোমা তৈরি হচ্ছে ইরানে
শাহবাগে নরঘাতকের ফাঁসির দাবি উচ্চকিত
ব্লগার খুন
অচেনা কেউ পাশ দিয়ে অদৃশ্য হেঁটে যায়
রক্তিম উত্তপ্ত কালরাত
আমি তোমাকে চাই
নিশ্চুপ পাহাড়ে হঠাৎ অগ্নুৎপাত
আমার দু’চোখে ফোটোসান গ্লাস
আমি তোমাকে ছুঁতে চাই
জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে চাই
এমপি থ্রী হরর মিউজিক চলছে সারা রাত
কাউন্ট ডাউন আরেকটি বিগ ব্যাংয়ের
হাইড্রোজেন বিস্ফোরণ
তোমাকে শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য এ কাতরতা
শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য
হারানো অর্ফিয়ূস তুমি নেমে এসো আজ রাতে আমার পৃথিবীতে
১৭/২/২০১৩
ল্যাবরেটরি
তুমি এলে না
অন্ধকার ল্যাবে বকযন্ত্রের নল দিয়ে বেরোচ্ছে বাষ্প
বুলডোজারের আঘাতের মতো পিষ্ট রাত্রিগন্ধা
নল দিয়ে উপরে উঠছে পারদ
হলুদ আকাশে ধাতব রূপালী মেঘ
তারপর তরল ধাতুর বৃষ্টি
ধাতব রামধনু পশ্চিম আকাশে
যার যার নিজস্ব পৃথিবীতে ফুলগুলো স্টেইনলেস ইস্পাতের
বরফের চেয়েও শীতল নীল কুয়াশা চারদিকে
আমার নিশ্বাসে বাষ্পীভূত পারদ
আমার শরীর আমার হাড়-অস্থি আমার মগজ ১০০০° উষ্ণ
দুঃসহ ধাতব স্মৃতির মতো শক্ত-কঠিন
বকযন্ত্র দিয়ে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধের এসিড
অসহনীয় প্রতীক্ষার স্বপ্নপিষ্ট রূপালী বল ডিজিটাল আকাশে
পশ্চিম দিগন্তে প্রিজম আলোর সূর্যাস্ত
………..
তুমি আসবে না
২৪/৮/২০১৩
ডিম লাইট
কেউ নেই সেখানে এখন
তাদের হৃদয় আজ ঘাস
টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায়
একদিন সবাই ছিল
ছিলাম না শুধু আমি মনোপলি খেলায় মাতাল
রাজা-রানী-গোলামেরা দল বেঁধে ব্রিজ খেলে আমি থাকি একা
আজ জনশূন্য গ্রহ শুধু ফুল পাখি প্রজাপতিময়
আমার কপোট্রন জুড়ে চোরাবালি তলাহীন
আমার হৃদয় আজ ঘাস
কেউ নেই কোথাও এখন
একা একা সুরঞ্জনা নীলাকাশে স্মৃতি টাইপ করে
আমার কপোট্রনের নির্জন প্রান্তদেশে একটি ডিম লাইট
১৪/৪/২০১৩
একটি দরখাস্ত
মাননীয়া
স্বর্গ-উর্বশী,
পূর্ণিমা চাঁদ,
স্বপ্নের আকাশ।
অনিন্দিতা অসূর্যম্পশ্যা,
অপরাহ্নের রক্তাভ নিরুদ্দেশ মেঘ আমাকে চুপি চুপি জানালো, আপনি আপনার পদ্ম-ওষ্ঠের একটি চুম্বন ও একটি আংটি প্রদানের পাত্র সন্ধানরতা। আমি বেঠিকানা উদ্বাস্তু অপ্রতিম তার পাত্র হিসেবে নিজেকে যোগ্য মনে করি। আপনার পদ্ম-অধরের একটি স্পর্শ পেয়ে আমি অমর হবো।
কৃপাদৃষ্টি করুন।
আপনার অনুগত
ভাসমান কচুরিপানা।
জীবন-বৃত্তান্ত
জন্ম-তারিখ: অজানা কাল
বাসস্থান: প্রতিবিম্বিত জল
শিক্ষা: স্বপ্ন-কল্পনায় স্নাতক (পৃথিবীর পাঠশালা)
অভিজ্ঞতা:
- রক্তিম সূর্যাস্তের বেলা প্রাক্তন প্রিয়তমার ললাটের রক্তকরবীর শিখা অন্তর্চোখে দেখেছি।
- হাসনাহেনার সুবাসে প্রিয়ার পারফিউমের গন্ধ শুঁকেছি।
- আকাশের চাঁদ দেখে সহস্র বর্ষ বৃদ্ধা প্রেমিকার অক্ষি-রেটিনার স্কেচ এঁকেছি।
- অতন্দ্রিত রাতে আকাশের তারার সঙ্গে গোপন প্রেমার্তির কথা বলেছি।
অতিরিক্ত কার্যক্রম:
- হাজার স্বর্ণমুদ্রা মূল্যের ব্যাঙাচি মেরেছি।
- ম্যানহোল খুলে মৃতা শূকরীর মল ঘেঁটেছি।
- ময়ূরীর মাংস খেয়ে হাড়গোড় কবর দিয়েছি।
- মরা ইঁদুরের রক্তমাখা ঠোঁট চেটেছি।
বিশেষ আগ্রহ: স্বপ্ন দর্শন – উজ্জ্বল দেবদূতের স্বপ্ন, ঊর্ধ্ব নীলিমার স্বপ্ন, সুউচ্চ পাহাড়ের স্বপ্ন, নীল স্বপ্নাবেশের স্বপ্ন –
রেফারেন্স: আগুন বাতাস জল – আদিম দেবতারা
২০০৪
নিউর্যালজিয়া
সংশয়-ঘূর্ণাবর্তে নিরন্তর সত্য পাক খায়।
ভ্রান্তির গভীরে সত্য, সত্যের গভীরে ভ্রান্তি আর
এতত্ত্বেও ভ্রান্তিহীন ধ্রুব সত্য বিন্দুমাত্র নেই।
মহাজাগতিক কোনো তত্ত্বে ধ্রুব সত্য নেই, তাই
সত্য-স্বপ্ন-রূপ মধ্যে কোনোটিই ধ্রুব বস্তু নয়।
কেবল প্রত্যেকের পৃথক নিজস্ব অন্তর্জগৎ
কেন্দ্রভূমি সৃষ্টি করে আপেক্ষিক স্বতন্ত্র ধ্যানের।
তারপর চতুর্দিকে ঘুরে ফিরে আপামর কাল
অণু-পরমাণু হয়ে মননের বিভিন্ন গোলক।
অতঃপর
ভিন্ন ও পরস্পর অচেনা সত্তার বৃত্ত
পাশাপাশি মার্চপাস্ট করে;
সংঘবদ্ধ প্রোটনের মিলিত সংঘগুলো
দেহ হয়ে সত্তার আশ্রয় চায়।
বৃত্তকে অন্য বৃত্ত ধারণ করে, জন্মায় বৃত্তের মিথুন।
বৃত্তে বৃত্তে যোগসূত্র, বৃত্তে বৃত্তে প্রেম,
বৃত্তে বৃত্তে বিরোধ আর
বৃত্তে বৃত্তে সৃষ্টি হয় উন্মাদনা, সমকাম, নীল ঈর্ষা, ক্লান্তির ক্লেদ।
অন্য কারও মনোজাগতিক
বৃত্তকে বন্দী করে আমার সত্তার বৃত্তসীমা;
বৃত্তদ্বয় যুক্ত হয় অন্য এক ছেদক বৃত্তে।
তখন সে’ মধ্যবৃত্তে চাঁদ, ফুল, রাত্রি, ঘুম, স্বপ্ন, ♥, ওঁ
– সব মিলে জন্ম দেয় এক অমর্ত্য অন্তর্জগতের।
তারপর
ঘুমন্ত রাত্রির স্ক্রিণে
স্বপ্নিল চরিত্রেরা স্ব শরীরে আশ্চর্য বিকৃতি ঘটায়।
নখে রঙীন পোলিশ, লিপস্টিক ঠোঁটে এঁকে
স্ব সত্তায় কারুকাজ করে।
অ অ অ অবাধ ইচ্ছে আপনার বাস্তবতা চরিতার্থ করে।
স্ব স্ব স্বপ্ন ত্রিমাত্রায় ভেঙেচুরে রূপ নেয়
অদৃষ্টপূর্ব কিম্ভূতের।
প্রিজমকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে গিলে খায় আকাশের প্রমত্ত তারকা।
রাতের অন্ধকারে ফিনফিনে কুয়াশা ওঠে জেগে;
যেন ভূতুড়ে কাফন।
পুরাণ ও রূপকথার চরিত্রেরা ভিড় করে
অজস্র ও স্ববিরোধী তত্ত্ব নিয়ে আড্ডায় মাতে।
স্বপ্নগুচ্ছ জিমন্যাস্ট হয়ে শিল্প তৈরি করে শূন্যের ভেতর।
মৎস্যকন্যা, ডাইনী ও প্রেতিনীরা দলে দলে
বর্ণিল বস্ত্র পরে সমাবেশ করে;
ব্যাঙ্গমা, বামন ও এইঞ্জেলেরা সম্মিলিত সুরে
আবৃত্তি করে পদ্য দ্বন্দ্ব-হত্যা-প্রেমের।
দুঃখিত দিশেহারা একটি মোটরকার
ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভেঙে স্ব ইচ্ছের সার্থকতা চেয়ে
গলি গলি মদমত্ত ফুল স্পিডে চলে।
অলাতচক্রে চড়ে বিয়াত্রিচে, অর্জুন, দশগ্রীব, ফস্টাসেরা
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতালের ত্রিবিশ্বে বেড়ায়।
জড় নির্বাক ট্রেন নির্বিকারে হেঁটে চলে,
ক্রস করে স্টেশন ও জনপদ।
সবকিছু দ্রুতগতি ট্রেনের জানালায়
মুহূর্তকাল চোখে পড়ে,
তারপর পিছে সরে যায়,
ক্রমে অবলুপ্ত নিরুদ্দেশ ঠিকানায়।
স্টেশন-প্ল্যাটফর্ম মরে ভূত হয়ে যাত্রীদের
সকারের ফাঁকা নেটে নিক্ষেপ করে।
অতঃপর পলায়ন-পথ খোঁজে নীল স্বপ্নরথ।
অপমৃত্যু তাড়া করে সত্তার কেন্দ্রভূমি,
শূন্য ঘরে তক্তপোশে মরে থাকে, ফের জাগে,
দৈনিক তেরোবার মৃত্যুর কাছে বন্দী হয়।
অপমৃত্যু কেঁদে ওঠে, ব্যর্থতার দুঃখকে আবৃত্তি করে,
অপমৃত্যু সিঁড়ি বেয়ে স্বস্তিহীন ছাদে ওঠে,
অপমৃত্যু ঘরময় দাপাদাপি করে শেষে
বরফ-ঢাকা কফিনের অন্ধকারে তৈরি করে স্থান।
স্বপ্নের রাত্রিগুলো ব্যর্থতার নীল দুঃখে স্ব শরীর ব্যবচ্ছেদ করে,
ডাস্টবিনে দলা করে লাশের স্তূপ আর
অতি সূক্ষ্ম ভাইরাসের নিরাকার কুটিল নকশার
আপ-ডাউন নৃত্য চলে – ধূসর কোলাজ –
জন্ম, দেহ-সঙ্গম, গর্ভ, মৃত্যু, পরলোক –
মানব-জিনের ব্যান্ড বাজাচ্ছে পিয়ানো ও ড্রাম
করোটিতে; পরলোকে বাইবেলী স্বর্গ, নাকি
অতল তিমির?
উর্বশী-উন্মাদনা-দুঃস্বপ্ন-উচ্চাকাঙ্ক্ষা-চরসের ভোজ?
১৯৯৫
বিবাহপত্র
বর: যন্ত্র কনে: মানবাত্মা
পিতা: ধাতু পিতা: রক্ত
মাতা: বিদ্যুৎ মাতা: প্রেম
নিবাস: কারখানা নিবাস: সমাজ
সময়: বিশ্ব ধ্বংসের মুহূর্তে
স্থান: মহাশূন্যে ভাসমান স্যাটেলাইট
সুধী,
সমাগত এক অশুভ মুহূর্তে যখন বিশ্ব ধ্বংসের প্রান্তে এসে দাঁড়াবে, তখন আমাদের কন্যা মানবাত্মার সঙ্গে কারখানা-নিবাসী ধাতুপুত্র যন্ত্রের শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে।
এ’ অনুষ্ঠানে আপনার মৃত শবের নির্দয় উপস্থিতি কাম্য।
রক্ত ও প্রেম
২৬/৯/২০০৪
বানর ও তৈলাক্ত বাঁশের অংক
- একটি বানর ৯২ ফুট উঁচু একটি তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। বানর পিচ্ছিল বাঁশটি বেয়ে প্রথম মিনিটে ১২ ফুট উঠে কিন্তু পিছলে যাওয়ায় দ্বিতীয় মিনিটে ৮ ফুট নেমে যায়। বাঁশের মাথায় উঠতে বানরটির কত মিনিট সময় লাগবে?
সমাধান:
বানরটি প্রথম ১ মিনিটে বাঁশ বেয়ে উঠে ১২ ফুট
বানরটি পরবর্তী ১ মিনিটে পিছলে নামে ৮ ফুট
∴ বানরটি মোট ২ মিনিটে বাঁশ বেয়ে উঠে (১২-৮) ফুট
=৪ ফুট
শেষ দফা ১২ ফুট উঠে বাঁশের ডগায় পৌঁছানোর পর বানরটি আর নিচে নামবে না। তাই মোট উচ্চতা থেকে ১২ ফুট নিচ পর্যন্ত অর্থাৎ (৯২-১২)= ৮০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উপরের নিয়মে হিসেব করতে হবে।
বানরটি ৪ ফুট উপরে উঠে ২ মিনিটে
∴ বানরটি ১ ফুট উপরে উঠে ২/৪ মিনিটে
∴ বানরটি ৮০ ফুট উপরে উঠে [(২/৪) x ৮০] মিনিটে
= ৪০ মিনিটে
বাকি ১২ ফুট উঠতে লাগবে ১ মিনিট
∴ বাঁশের ডগায় পৌঁছতে মোট দরকারি সময় (৪০+১) = ৪১ মিনিট
সংক্ষেপে,
বিটলে বানর তরতর করে পৌঁছে যাবে বাঁশের ডগায়। সেখানে তাকে বিদ্ধ করবে এক ভয়ংকর কাঁটা। তার শরীর থেকে ঝরবে রক্ত। সে রক্তে ভেসে যাবে পার্কের এঁটেল মাটি। রক্ত থেকে রক্তবীজের মতো জন্মাতে থাকবে আরও বানর। এসব বানর থেকে একইভাবে আরও বানর। তারপর এদের থেকে আরও বানর। তারপর আরও বানর। রক্তাক্ত উর্বরা মাটি থেকে চাড়া দেবে সূর্যমুখী, রাত্রিগন্ধা, রক্তগোলাপ। ফাঁকা আকাশে উড়াল দেবে এক ঝাঁক সাদা বক, নীলকণ্ঠ, হাঁড়িচাচা।
১০/৯/২০১৪
নির্ঘুম দুঃস্বপ্ন
এক মধ্যরাত।
ঘড়ির পেন্ডুলামে হাতুড়ি পেটালো বারোবার
অস্থির সময়।
সেসময় শব্দব্যাধ, ডাইরি ও আমি মিলে
তৈরি হলো স্বপ্ন এক অজাগতিক।
ময়ূরপঙ্খী চড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী
পার হয়ে ভিড়লাম জনশূন্য এক সাদা দ্বীপে।
মরচে ধরা এক ব্লেইড সেসময় দলে ভিড়ে
অন্য তিন সঙ্গীসহ গাঁজা ধরলো ঠোঁটে।
নেশাগ্রস্ত শব্দব্যাধ তার তৃতীয় সুহৃদকে দিয়ে
স্ব শরীর ব্যবচ্ছেদ করে
আমাকে রক্ত দিলো পান করতে।
অসতর্কতাবশত সে’ রক্ত আমি
ঢেলে দিলাম ডাইরির কালো লিপির উপর।
তখন প্রতিটি লিপি উত্তেজনায় অস্থির হয়ে
মুহূর্মুহূ স্থান বদল করতে করতে – স্থান বদল করতে করতে –
স্থান বদল করতে করতে
বিস্ফোরণ – প্রচন্ড বিস্ফোরণ হলো………………………
২/১০/১৯৯৫
Printed Version: