প্রোগ্রেস রিপোর্ট
অপ্রতিম রাজীব
মুনগ্লাস
জ্যোৎস্নার জ্যুস পান করে করে আজ হয়রান;
এখন আমি মুনগ্লাস পরি।
পূর্ণিমার ভরা চাঁদ,
অমারাত্রির চাঁদ,
ফাল্গুনের চাঁদ,
চকোর-প্রেমিক চাঁদ,
ঝলসানো রুটি চাঁদ,
দুধের বাটি চাঁদ,
নারীর মুখ চাঁদ,
শিশুর কপালে ঘুম-টিপ চাঁদ,
টিকটিকির নিশ্বাস চাঁদ,
গোলাপের পাপড়ি চাঁদ,
নীল কস্তুরি আভার চাঁদ,
স্বপ্নবনের চাঁদ,
বৃষ্টিরাতের চাঁদ
স্বপ্নের বৃষ্টিতে গ্লাস ভিজে যায়, চালু হয় অটো-ওয়াইপার……
সব চাঁদ পান করে ক্লান্ত আমি,
চোখে আজ মুনগ্লাস পরি।
১১/৮/২০১৫
ডুম-থ্রি
ফ্লুরসেন্ট সাবওয়ে।
টয়োটা স্টেনগান হাতে আমি নীলাঞ্জনাকে খুঁজি।
চারদিকে শত্রুর প্রহরা, তারাও আর্মস্ হাতে।
উপরের রোদেলা জগতে ধানক্ষেতে চাষ করে রোবট চাষীরা।
আমার মনের আকাশে চাঁদ যেন হলুদ রঙের ফিলিপ্স্ ডিম লাইট,
আর মেঘ স্তূপে স্তূপে জমা ইগ্লু ভ্যানিলা আইসক্রিম।
ওই দূরে পার্টিশানের আড়ালে তাকে দেখা যায়।
এখানে আমার নকটার্ন – ওয়ান – টু – থ্রি – ফায়ার –
গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হল –
নীলাঞ্জনা পালিয়ে বেড়ায়।
চারদিকে শত্রুর প্রহরা, প্রত্যেকের হাতে স্টেনগান।
গুলির বৃষ্টির মাঝে আমি হেঁটে যাই।
ওয়ান – টু – থ্রি – ফায়ার –
আবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট।
বিপদসঙ্কেত-বাতি জ্বলছে, নিভছে, বাজছে সাইরেন।
খুব বেশি সময় নেই, মেমোরি অ্যালার্ট বার্তা,
পুরো বাঙ্কার জুড়ে জ্বলছে-নিভছে আলো ক্রমাগত।
আমার সত্তা জুড়ে জিলেট শেইভিং ফোমের মেঘ।
আমার চেতনার নীলাকাশে হ্যাড্ অ্যান্ড শোল্ডার শ্যাম্পুর ঝড়।
ঘাসগুলো লাক্স লিকুয়িড সোপের শাওয়ারে স্নানরত,
এবং মুন্ড্রপ্স্ পারফিউম মাখা মনের ইউকেলিপ্টাস।
হঠাৎ ব্ল্যাকআউট।
নীলাঞ্জনার চাপা হাসি কানে আসছে।
কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে?
ওয়ান – টু – থ্রি – ফায়ার –
তার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে আছে সাবওয়ের ফ্লোরে।
এসিআই এরোসোল স্প্রের ঘায়ে গেইম ওভার।
নীলাঞ্জনাTM, তোমার হৃদয় আজ রক্তভেজা মাইক্রোসফ্ট্ ঘাস।
৮/৯/২০১৫
ভূত
ক্রিমেটোরিয়ামের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ এক সাদা পেত্নী পথ আটকাল। তার সারা মুখে ভয়ংকর মুচকি হাসি। এড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। জংলী এক ভূত আদিম ভয়ংকর দাঁত বের করে অট্টহাসি দেয়া শুরু করল। আর অন্ধকার চার দিগন্ত থেকে অট্টহাসি আসা শুরু হল। তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশ কেটে গেলাম। এবার বিশাল এক হিজড়া ভূত – তার তিন চোখ, মাথায় একটি শিং, চোখ মচকা ফুলের মত লাল, হাতে-পায়ে তিন ফুট লম্বা নখ, হাতির মত কান আর শুঁড়। এবার হাই তুললাম, আর ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে সামনের পথে চললাম।
নিশ্চিন্তে হেঁটে যাচ্ছি শ্মশানের মাঝ দিয়ে। এগ্রহের কোনো ভূতই অন্তঃত মানুষের মত ভয়ংকর নয়।
২২/৮/২০১৫
ফাঁকা
- সঠিক শব্দ/শব্দগুচ্ছ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর:
সার্টিফিকেট অ্যালবামটি অজস্র অর্জনে ঠাসা। এস.এস.সি. থেকে শুরু করে এম.এ. সনদপত্র, আধা ডজন প্রশংসাপত্র, বিতর্ক, কুইজ, আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রত্যয়নপত্র, কী নেই? নেই জীবনের সবচেয়ে দামি সনদটি। নেই কোনো (অ)_। আকাশে বিকেলের লাল মেঘ।
উত্তর: (অ) ভ্যালেন্টাইন দিনের কার্ড
১৭/৮/২০১৫
ডিলিটিং
করোটির ফোল্ডারে ঢুকলাম। চোখে পড়ল একটি ফাইল – academiclife.com। সিলেক্ট করে মাউসের ডান দিকের বাটন টিপতেই এল একটি বক্স। সেখানে অনেক অপশনের মধ্যে Delete -এ ক্লিক করলাম। একটি ডায়ালগ বক্স এল, তাতে একটি প্রশ্ন – Are you sure you want to send the file to the recycle bin? নিচে তিনটি অপশন – Yes, No ও Cancel । কিছুমাত্র দেরি না করে Yes -এ ক্লিক করলাম। তালিকা থেকে ফাইলটি অদৃশ্য হল। আরেকটি ফাইল দেখলাম – lovelife.com। কিছুক্ষণ স্মৃতির বাথটাবে ডুবে থেকে এটিও ডিলিট করলাম। একে একে ডিলিট করলাম career.docx , diary.doc ও friends.docx।
করোটির কম্পিউটার এখন অনেক দ্রুত হয়ে উঠেছে।
১৮/৮/২০১৫
ফায়ার-ব্রিগেড
রাজু তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্র। ফাগুনের আগুন বনে বনে লেগেছিল। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল তার স্কুলে। ত্রস্ত চোখে আজও সে দেখতে পায় তার লেলিহান শিখা। সেদিন ফায়ার-ব্রিগেড এসে আগুন নিভিয়েছিল।
রাজু এখন দমকলকর্মী। তার মনের রাজ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে। রাতের ঘুমে স্বপ্নের ভেতর ফায়ার-ব্রিগেড এসে সে’ আগুন নেভায়।
৫/১১/২০১৫
হ্যান্ডনোট
পরীক্ষার আগের রাতে ফেইসবুকে প্রশ্নপত্র পেয়েছি (মানে প্রশ্ন ফাঁস)। সব কমন প্রশ্নের সাথে একটিমাত্র আনকমন প্রশ্ন: তোমার প্রেমিকার রূপ বর্ণনা কর। মহা ঝামেলা! ম্যাসেইজ পাঠালাম এক সহপাঠীর কাছে: Dosto, ekta handnote patha plz. রিটার্ন ম্যাসেইজ এল আধ ঘন্টা পর:
আমার প্রেমিকার নাম ফ্লোরা। সে ফর্সা, সুন্দরী। চুল ব্ল্যাকহোলের মত কালো। নাক হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মিথিক বাঁশির মত। গ্রীবা অতিথি পাখির মত। পা ফ্লুইডের মত সাদা। কথা বলার সময় মনে হয় ‘টার্মিনেটার-থ্রি’ছবির মেয়ে রবোটটির মত। সে আমার সাময়িক ভ্যালেন্টাইন।
প্রিন্ট নিয়ে ঝারা মুখস্থ করা শুরু করলাম:
আমার প্রেমিকার নাম ফ্লোরা। সে ফর্সা, সুন্দরী। আমার প্রেমিকার নাম ফ্লোরা। সে ফর্সা, সুন্দরী। আমার প্রেমিকার নাম ফ্লোরা। সে ফর্সা, সুন্দরী। চুল ব্ল্যাকহোলের মত কালো। চুল ব্ল্যাকহোলের মত কালো। চুল ব্ল্যাকহোলের মত কালো। …………
১০০% গ্যারান্টি: জিপিএ ৫।
২১/৮/২০১৫
কসমস-এটিক্স্
আমার দু’চোখে ঘুম নেই, দিনরাত জেগে থেকে নেট সার্ফিং।
ওদিকে আকাশে ভিম ডিটারজেন্ট পাউডারে ধোয়া মেঘ,
আর মাঠে মাঠে মুনড্রপ্স্ সেন্ট মাখা ফসল।
পূর্ব কোণে জমছে মেরিল বেবি শ্যাম্পু করা কালো চুল,
নেমে আসবে জেনারেল এসির মত ঝড়।
আর সত্তার গভীরে আমি ফগ্ বডি স্প্রে মাখি,
হাত লাগানোর আগেভাগে
লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিই।
আমার সত্তা জুড়ে স্কয়ার পারফিউম, আমার দু’ঠোঁটে মেরিল লিপজেল।
হৃদয়ের বাসি ফল ফ্রুট্স্ ব্লেন্ডারে নানা সহযাত্রীর সাথে
নাইট-ক্লাব স্টাইলের রাত পার করে।
আমার দু’চোখে ঘুম নেই, আমার সত্তা জুড়ে অতিকায় ড্রেজারের
ভারচুয়াল উপস্থিতি।
আমি এক ফেরারি উদ্বাস্তু, যার মর্মে মর্মে বাজছে পশ্চিমা ড্রাম।
স্বপ্নের ডেথসেলে বল ডান্স নাচছে প্লাস্টিকের দু’টি সরীসৃপ।
আমার স্বপ্নকে দিই এসিআই এরোসোল স্প্রে,
আর অন্ধকার রুম জুড়ে পিঙ্ক রঙের সোয়াশ্ ডিম লাইট
সানপেনশানে যাচ্ছে বার বার।
কোথায় পালাব আজ? যেদিকে তাকাই, শুধু নিয়ন গ্যাসের মৃতপ্রায় বাতি।
ফ্লোরে ফ্লোরে জমেছে ময়লা, লাগবে এক ক্যান স্কয়ার স্যাভলন।
ব্রেনের ভেতরে এক ঝাঁক কীট, দরকার মরটিন স্প্রে।
আর এক রাশ আইবিএম অ্যাটোমিক মেঘে
হৃদয়ের ইগ্লু স্ট্রবেরি আকাশ ছাওয়া।
কী করব, কোথায় যাব, হৃদয়ের ক্লাবে ক্যারোটিন।
একটি মোটরবাইক ফান্টা খেয়ে সারা রাত লেনে লেনে ঘুরে।
আমার মেজেন্ডা চোখে ট্যাং ভিটাসিন-সি শরবতের
কমলা রাজত্ব,
হে ডক্টর অর্ফিয়ূস, দাও হেপাটাইটিস্-ডব্লিউ ভ্যাক্সিন্।
১৪/৯/২০১৫
ফান্টা
স্ট্রবেরি রঙের সন্ধ্যা।
চাঁদ উঠেছে ড্রিম লেইকের উপরের আকাশে।
এসি’র বাতাসে তন্দ্রালু বিড়বিড়
ইউকেলিপ্টাস গাছের।
পাতার ফ্যাক্টরিতে মেশিনের ঘর্ঘর শব্দ
যেখানে তৈরি হচ্ছে ক্লোরোফিল।
একটি পিঙ্ক রঙের বিড়াল হালুম শব্দ করে খাচ্ছে রজনীগন্ধা
চিবিয়ে চিবিয়ে,
তার চোখে হলুদ বিদ্বেষ।
ব্যাঙ্গমা ডাইনি পরী মিকি মাউস মিনি মাউস পার হচ্ছে জেব্রা ক্রসিং,
আর কবরের একটি ভূত বারবার জেগে দিচ্ছে কিমাকার হাসি।
কারখানায় তৈরি স্বপ্ন ক্যানে ক্যানে ভরে ওঠে
লোড হচ্ছে ওয়াগনে।
গ্রহ জুড়ে বিশাল এক রোলার কোস্টার,
তাতে চড়ে ফ্যান্টাসি কিংডম ঘুরে ফিরি ফান্টা খাওয়া রাতে।
মেঘের শরীর জুড়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে কালো জ্বর,
চকলেট আকাশে তার হলুদ উপস্থিতি।
হেপাটাইটিস-এফ জ্বরে চাঁদ চুষে খাই
সি-ভিট ট্যাবলেট ভেবে।
হা হা! সভ্যতা নাকি এক কাছিমের খোল! হা হা হা হা হা হা!
মাথার ভিজুয়াল ফিল্ডে বেড়ে উঠছে চকলেট গাছ,
পাহাড়ের গায়ে গায়ে কার্টুন-আঁকা বিলবোর্ড।
ফেরারি সন্ধ্যায় বোতলের বিস্ফোরণ
চাঁদের বিস্ফোরণ
হার্ট-সাইনের বিস্ফোরণ
গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে জমছে নিউক্লিয়ার মেঘ
………… আজ রাতে স্ট্রবেরি আমার আর আমি স্ট্রবেরির
২১/৯/২০১৫
মাতাল চিড়িয়া
মধ্যরাত। পিল খেয়ে তন্দ্রালু চাঁদ
ঘুম দেশে বেড়াতে গিয়েছে।
কালো আকাশে হাওয়াই মিঠার মত মেঘ
উড়ে যাচ্ছে নির্বিচারে।
খাঁচায় এক কোট পরা শিম্পাঞ্জির দাপাদাপি,
তার চাই চকলেট মিল্ক।
বনমানুষ বডি স্প্রে করে
পার্টিতে যাবে সিয়েনায় চড়ে।
লাজুক বানর চিবোচ্ছে পিজা, নীল টুপি মাথায়
সে গাইছে গান।
সেন্ট মেখে ক্যাঙ্গারু আংটি হাতে দাঁড়িয়েছে জানালার পাশে,
নিচে তার রোমিও বেবুন।
কাঠবিড়ালী এক গাছ থেকে অন্য গাছে
মেট্রো রেলে চড়ে ঘুরছে সারা রাত।
পিপীলিকা-ভূক এক পাবে বসে সন্ধ্যে থেকে
খাচ্ছে স্ট্রবেরি মিল্কশেইক্, ঘুরছে তার সংশয়ী চোখ।
সিংহ চুলে লাগাচ্ছে
হেয়ার ড্রায়ারের হাওয়া।
রাগী রাইনো গজরাচ্ছে ফিডার বোতল মুখে নিয়ে,
তার ঠোঁটে লেপ্টানো ভ্যানিলা পেইস্ট্রি।
ফেইস্ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিচ্ছে মুখ,
চোখে তার লাল-নীল-পিঙ্ক হার্ট-সাইন।
মাতালের রাতে সব ঘুম-পরী হয়ে
ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে ইডেন উদ্যানে।
২৭/১০/২০১৫
শপিং মলে
বসন্ত-উৎসবের রাতে স্ত্রীকে নিয়ে শপিং মলে ঢুকলাম। বিশাল মলটি নানা পণ্যে সাজানো। একটি রেকে টিনভর্তি সততা, মানবতা, উদারতা ও সহৃদয়তা রাখা। সেলস্ম্যান মি. গিনিপিগের সাথে তর্কাতর্কি করে দরদাম ঠিক করলাম। তার দু’পাশে মি. খরগোশ ও মি. ক্যাঙ্গারু দাঁড়ানো; তারা তার সহকারী। সততার দাম ১০০০ টাকা, মানবতার দাম ৫০ টাকা, উদারতার ৩০০ টাকা এবং সহৃদয়তার দাম ২০০ টাকা। সব কিনে একটি ট্রলিতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম উৎসবমুখর রোডে।
২৫/১০/২০১৫
দুধের/ ট্রেট্রোলের সাগর
টিউট্রন গ্রহ।
স্পেস্-ঈগলে চড়ে সেখানে আমাদের যাত্রা।
তার আকাশ গোলাপী রঙের, মাটি বেগুনী।
দূরে ভেসে আছে নষ্ট, চূর্ণ, হারানো পৃথিবী।
রাডার দিয়ে স্পেস্-ঈগল সবকিছু চেখে দেখে,
মাঝে মাঝে নল দিয়ে ছুঁড়ে টেট্রোল – বিষাক্ত ফুয়েল।
এর ঘায়ে গ্রহটির যত গিরি-বন-নদী
গলে যায়, মিশে যায় এসিডিক মেঘের দিগন্তে।
স্পেস্-ঈগল হল স্পেস্-বোট, এগুচ্ছে জলাধারে।
হঠাৎ এল এক দুধ-সাগরের ঢেউ, চারদিকে সাদা পর্বত।
একেকটি পাহাড়ে দুধের ঝর্না, সাগরের মাঝবুকে দুধের ফোয়ারা।
কলাবতী রাজকন্যা রূপার ময়ূরপঙ্খী চড়ে পাড়ি দেয়,
তার মেঘবরণ চুল, কপালে তন্দ্রালু চাঁদ আঁকা।
নৌকার সোনার বৈঠা, হীরার হাল, গজমন্তী দাঁতের লক্ষ দাঁড়,
দ্রুত যাচ্ছে ছুঁটে।
স্পেস্-বোট ছুঁড়ে দিল কয়েক রাউন্ড তরল টেট্রোল
আর লেজারের রে।
সব চাঁদ, সব তারা অস্তে গেল,
কলাবতীর নৌকা গেল ডুবে,
তারপর কালো এক দানুষিক সূর্য উঠল,
স্বপ্নের দুধ-সাগর হয়ে গেল রোবোটিক ট্রেট্রোলের সাগর।
১৫/১০/২০১৫
ভিটামিন-চার্ট
প্লে-গ্রুপের শিশুরা শোন, তোমাদের আজ শেখাবো কোন খাবারে কী ভিটামিন থাকে। তালিকার কোন খাবারটি তোমরা বেছে নেবে বল। পূর্ণ মান: ৫।
খাবার / ভিটামিন
সবুজ শাকসবজি + আপেল – এ
মাংস + টুনা মাছ + ডিম + কলা + আলু + দুধ – বি
পেয়ারা + আপেল + কমলালেবু – সি
মিষ্টি রোদ – ডি
কড্ লিভার + স্যামন মাছ + চিকেন + সয়া দুধ + ভ্যানিলা – ই
চিংড়ি + স্যান্ডউইচ্ + রোল + ব্রকোলি + ব্লুবেরি + জলপাই তেল – কে
ফেইস্ওয়াশ্ + শ্যাম্পু + ফেয়ারনেস ক্রিম + পারফিউম – ডব্লিউ
২২/১০/২০১৫
মেঘমুল্লুকে ঝাপসা দিনে
মেঘ বলল, চল বেড়িয়ে আসা যাক। রোদ, বৃষ্টি আর রঙধনু রাজি হয়ে গেল। চার সঙ্গী হাঁটতে লাগল আকাশের মাঠ জুড়ে। এক সময় এল এক প্রসাধনী কারখানার কাছে। ফটকের কাছে আসতেই দৈত্যমত এক জন্তু তাদেরকে পাকড়াও করে চালান করে দিল কারখানার কাঁচামাল হিসেবে। স্বয়ংক্রিয় টেস্টটিউব, বীকার, বকযন্ত্র ও নল ঘুরে তারা একেকটি বোতল হয়ে বেরুল। মেঘ হল বোতলভরা লেবুর শরবত, রোদ হল বয়ামভরা কমলার জ্যুস, বৃষ্টি হল মিনারেল জল, আর রঙধনু রূপ নিল আপেলের জ্যুসের বোতলে। তারা চালান হবে শহরের মেগামলে। ওদিকে বাইরের শস্যক্ষেতে কত আলো, কত আকাশ!
২৫/১০/২০১৫
রঙধনু
এক পশলা দুঃখ ঝরে পড়ল। তারপর নীল আকাশ মুচকি হাসল। নীল স্বপ্নসুখে দুঃখেরা সমবেত হয়ে নাচতে লাগল। বেগুনী দুঃখ, নীল দুঃখ, আকাশী দুঃখ, সবুজ দুঃখ, হলুদ দুঃখ, কমলা দুঃখ ও লাল দুঃখ – সব দুঃখেরা মিলে বল ডান্স নাচতে লাগল। তারপর একেক রঙের আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা আকাশে। তাই তো পশ্চিম আকাশে আঁকা হল সাত বর্ণের দুঃখের রঙধনু! কালপুরুষ সে’ ধনুতে তীর যোজনা করে ছুড়ে দিল সপ্তর্ষির দিকে।
১৭/১১/২০১৫
মেঘ-বৃত্তান্ত
ম্যাঁও ম্যাঁও ডাকা একটি বিড়ালকে বীকারে ছেড়ে দিলাম। সে বকযন্ত্রের নল দিয়ে যেতে যেতে প্রজাপতি হল। তারপর হালুম শব্দ করতে করতে টেস্টটিউবে ঢুকে পড়ল। বেরুল এক কালো রঙের দৈত্য হয়ে। তারপর হিটারে ফ্রাই হয়ে বাষ্প হতে হতে ধীরে ধীরে হতে লাগল লাল, নীল, সবুজ, হলুদ মেঘ – ল্যাবে ডঙ্কার বেজে উঠল ডমরু ডমরু।
২৭/১১/২০১৫
ইস্টার দ্বীপের মূর্তিরা
দেবতারা ওলিম্পাস ছেড়ে পালাল। তাদের ফেলে যাওয়া হলুদ ডিমগুলো রঙ বদলাতে লাগল। শেষে প্রথম পূর্ণিমা রাতে খোলস নড়াচড়া করতে করতে ভেঙে গেল একটি ডিম। বের হল এক মারীচ রাক্ষস। তারপর দ্বিতীয় পূর্ণিমা রাতে আরেকটি মারীচ রাক্ষস, তৃতীয় পূর্ণিমা রাতে আরেকটি……এভাবে নয় পূর্ণিমা রাতে নয়-নয়টি মারীচ রাক্ষস বের হয়ে দাপাতে লাগল গ্রহ জুড়ে। ওলিম্পাস ছেড়ে দেবতারা পালাল। ফ্যান্টমের চাঁদ থেকে ঝরতে লাগল শিশির। শিশিরের স্পর্শে মারীচেরা হল একেকটি মর্মর মূর্তি। ছোট থেকে বড়, ছোট থেকে বড়……এভাবে তারা লাইন ধরল লাল কমলের কার্পেটে উঠবে বলে। ইস্টার দ্বীপের সৈকতের কাছে তারা এভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল……তার ছায়াছবি:
আর ডিমের ভাঙা খোলসগুলো লাল, নীল, বেলুন হয়ে আকাশে উঠল। তারা হয়ে জ্বলতে লাগল রঙীন বাল্বের মত।
১৩/১০/২০১৫
রোবোটিক প্রেম
আমার যান্ত্রিক বডির
উপরে লাগানো দু’টি ক্যামেরার লেন্স
যা দিয়ে আমি দেখি।
তার নিচে বাকপটু মাইক্রোফোন আর
ভয়েস স্পিকার।
এরও নিচ অংশে আছে কর্মনিষ্ঠ একটি সিপিইউ।
আর সবচেয়ে নিচে দু’টি স্বয়ংক্রিয় চাকা।
পৃথিবীর সব হোমো স্যাপিয়েন্স আজ ল্যান্স, মাইক্রোফোন, স্পিকার, সিপিইউ ও চাকা দিয়ে চলে।
আমি আমার ল্যান্স, মাইক্রোফোন, স্পিকার, সিপিইউ ও চাকার বিনিময়ে
শুধু তোমার ল্যান্স, মাইক্রোফোন, স্পিকার, সিপিইউ ও চাকা পেতে চাই।
২২/৪/২০১৬
পাতালের ডুয়েল
ট্রয়ের যুদ্ধে মৃত্যুর পর হেক্টর ও একিলিস পাতাললোকে গেল। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে আরেকটি দ্বন্দ্বযুদ্ধের আয়োজন করা হল। এবার হত্যা নয়, যে প্রথমে চুমু খাবে সে জয়ী হবে। ডুয়েল শুরুর পর দুই মহাবীর অনেক চেষ্টা করল প্রতিপক্ষকে চুমু খাওয়ার। হঠাৎ একিলিসের মনে পড়ল যুদ্ধবন্দী নারী ব্রাইসিয়াসকে সে কতোটা গভীর ভালোবাসায় চুমু খেত। তার মনঃসংযোগ নড়ে গেল আর সেই সুযোগে এক লাফে হেক্টর তাকে চুমু খেয়ে বসল। লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল একিলিস। তাকে পৃথিবীতে পুনঃনির্বাসন দেয়া হল আর জয়ী হেক্টর রয়ে গেল চিরতরে পাতাললোকে।
২২/৪/২০১৬
হারানো বিজ্ঞপ্তি
হারিয়েছে
একদিন ট্যাং গুলা শূন্য নীল আকাশে হাজারো মেঘ উড়ে বেড়াত। মেঘেরা হারিয়েছে।
হারিয়েছে
নিঝুম কালো রাতকে আলো করে বাঁশবনে চাঁদ উঠত। চাঁদ হারিয়েছে।
হারিয়েছে
ভারি বৃষ্টির পর দিগন্ত জুড়ে সাতরঙা রামধনু উঠত। রামধনু হারিয়েছে।
হারিয়েছে
রাত ও দুপুরের ঘুমের ভেতর রূপকথার রাজ্যে চলে যেতাম। সেখানে গজমন্তী হাড়ের খাটে সোনার পরী ঘুমাত। রূপকথার সে’ রাজ্য হারিয়েছে।
২৯/১২/২০১৫
ক্যাশমেমো
পৃথিবী ডিপার্টমেন্টাল স্টোর
ক্রেতার নাম: অপ্রতিম রাজীব
ঠিকানা: মরা ঘাসভূমি
পণ্য / পরিমাণ / দাম
মেঘ / ১ পাউন্ড / ১০০/-
বৃষ্টি / ১ লিটার / ৫০/-
রোদ / ১ ক্যান / ৭৫/-
বাতাস / ১ কেজি / ২১০/-
রঙধনু / ১ বস্তা / ৩২০/-
আকাশ / ১ ছটাক / ৬২৫/-
মোট: ১৩৬০/-
১১/১২/২০১৫
পেঁচার আকাশে চাঁদ
মহেঞ্জোদারোর কবি এক বন্য পাখির নাম ‘পেচা’ লিখেছিল। হস্তিনাপুরের তরুণ কবি সেই পাখি দেখতে চাইল আর এক রাতে সে গুটিগুটি পায়ে বের হল। বাইরে নিঃঝুম রাত, আকাশে চাঁদ, বাগান ভরা জ্যোৎস্না। এরই মাঝে ওই বন্য পাখিটি ডেকে উঠল। হস্তিনাপুরের কবি তার নতুন কবিতায় ওই পাখির নাম লিখল ‘পেঁচা’।
সেই থেকে আজও পেঁচার আকাশে চাঁদ উঠে।
১১/১২/২০১৫
কে প্রথম আয়না তৈরি করেছিল?
তার কোনো ইতিহাস লেখা নেই। প্রাগৈতিহাসিক পর্বের এক মহাশিল্পী। তার মনে তীব্র এক উচ্চাকাক্সক্ষা জন্মেছিল নিজেকে দেখার। তাই তিলে তিলে তৈরি করেছিল আয়না। অজস্র আয়নার সমাহারে সে গড়ে তুলেছিল এক বিশাল আয়না-মহল। তারপর সে নিজেকে দেখল – তার রূপ, যৌবন, উচ্চতা, আকৃতি। তারপর তার মাংস, রক্ত, ক্লেদ, ভূত, নিঃসঙ্গতা, নিষ্ঠুরতা, বীভৎসতা। সে চিনেছিল নিজেকে। সেই থেকে শিল্পীরা আজও আয়না-মহলে বাস করে।
২৯/১২/২০১৫
স্পিড্-ব্রেকার
ফর্মূলা-১ কার চালিয়ে চললাম অজানা গন্তব্যে। কিছু দূর যেতেই একটি জেব্রা ক্রসিং। এক প্লাটুন জেব্রা শিস দিতে দিতে রাস্তা পার হল। তাই কিছুক্ষণ থামিয়ে আবার চলতে লাগলাম। একটু পরে সাইনবোর্ড চোখে পড়ল: সামনে স্কুল, পার্কিং নিষেধ।
দ্রুত চালিয়ে সে’ স্থানটি কাটিয়ে গেলাম। তারপর ঢুকে পড়লাম এক বিশাল টানেলে। এর ভেতরে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার, তাই সাবধানে পেরোতে হল। টানেল থেকে বেরিয়েই দেখলাম একটি স্পিড্-ব্রেকার। সেখানে গতি কমালাম। তারপর চোখের উপর চাঁদ উঠল, আর দেখলাম লেখা আছে: বামে মোড় নেবেন না। এবার আর নির্দেশ মানা গেল না।
২৯/১২/২০১৫
মৃত্যু-সনদ
নাম: গাছপাথর
ঠিকানা: চাঁদের হাঁট
বয়স: ১০০০ বছর
লিঙ্গ: নপুংসক
জাতীয়তা: টিউট্রোনার
মৃত্যুর কারণ: ভিটামিন সি শরবত খেয়ে আত্মহত্যা
দীর্ঘকালীন অসুস্থতা: বিপন্ন বিস্ময়
বিশেষ স্বভাবগত দিক: ভূতটান
১৮/১১/২০১৫
রাইজোম-বিক্ষোভ
শরতের সকালে ঘাসগুলো শিশিরে ভেজা। এক অপতারকা সূর্য, বৃষ্টি ও স্বপ্ন শুঁষে নিয়েছে। স্বপ্নিল সুরঞ্জনা ঘাসের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলে গেল। তার পেছনে গর্জন করতে করতে এল একটি বুলডোজার। সব ঘাসকে নিষ্পেশন করে চলে গেল বাগান ছেড়ে। মদে মাতাল রাইজোমগুলো প্লেকার্ডে লিখল:
রাইজোমের আকাশে নীল মেঘ ফিরিয়ে দাও
রাইজোমেরা মেতে উঠেছে সি-ভিট ভোজের উৎসবে।
২০/১/২০১৬
Comments are closed